“দিরিলিস আরতুগরুল “ সারাবিশ্বে আলোড়োন সৃষ্টিকারী ঐতিহাসিক ইসলামি সিরিজ
- ৫ সিজনে ১৫০ ভলিউম (প্রতি ভলিয়ম দুই ঘন্টা) মুসলিমদের বিজয়গঁাথা ঐতিহাসিক সিরিয়াল " দিরিলিস এরতুগ্রুল " বা The Resurrection of Ertugrul। বাংলা অনুবাদ করলে হয় এরতুগ্রুলের পুনরুত্থান।
মুসলিম বিশ্বের সর্বশেষ খিলাফত Ottoman Empire বা উসমানীয় খিলাফাত এর প্রতিষ্ঠিতা প্রথম উসমানের পিতা গাজী এরতুগ্রুল ( যিনি ছিলেন এই মহান সম্রাজ্যের, খিলাফতের স্বপ্নদ্রষ্টা) কে নিয়ে তৈরি এই ঐতিহাসিক সিরিয়াল।
টিনের চালে ঝুমঝুম বৃষ্টির মাঝে অথবা চকচকে জ্যোৎস্নার আলোয় শীতলা বাতাসে যে অনুভূতি হয়; তা বোধহয় অনুভব করা যায় ভিন্নকিছু মুহূর্তেও..
কিছু বই আছে, কিছু মুভি,সিরিয়াল আছে যেগুলোর ভিতরে একবার ঢুকে যেতে পারলে তেমনি এক অজানা অনুভূতি হ্রদয়গহীনে এসে নোঙর ফেলে।
"দিরিলিস আরতুগূল" দেখার সময় কেমন অনুভূতি হয়েছিলো, তা হয়তো আজ বলবোনা! শুধু বলবো_
আমাদের বিজয়গাঁথা ইতিহাস, আমাদের জাতিসত্ত্বার অসীম ত্যাগ কিছুটা উপলব্ধি করতে হলে এটা দেখতে হবে।ছোট্ট মুসলিম গোষ্ঠীটি মহান রবের রহমত আর তাদের যোগ্যতা বলে সাত'শত বছর তিনটি মহাদেশ শাসন করেছে..
ইতিহাসের সাথে হুবহু মিল রেখে করা সিরিজটিতে "ইতিহাসের উজ্জ্বল তারকা গাজী আরতুগূল বে" র নেতৃত্বে তুর্কী মুসলিমদের যে উত্তান হয়েছিলো তাই-ই চমৎকৃতভাবে দৃশ্যপাত করা হয়েছে..
তুর্কী মুসলিমদের আত্নপরিচয়ের, হারানো ইতিহাসের স্বরুপ সন্ধানও এতে করা হয়েছে।
সিরিয়ালটিতে সেই সময়কার ইতিহাস নিয়ে রচিত যখন জ্ঞান বিজ্ঞান ও অভিজাত্যে গোটা বিশ্বকে নেতৃত্ব দেওয়া এককালীন মহা পরাক্রমাশালী স্পেনপর ইসলামী সম্রাজ্য তখন বিলুপ্তপ্রায়। যৌবনের সব জৌলুস হারিয়ে ইরাকের আব্বাসীয় খেলাফত তখন বয়সের ভরে নুইয়ে পড়েছে। একসময়ের ঐতিহাসিক মুসলিম সেলজুক সম্রাজ্য মোঙ্গলদের অত্যাচার, নিপিড়নে বিপর্যস্ত। যখন মুসলমানরা দিকভ্রান্ত হয়ে বিভক্ত হয়ে যাচ্ছিলো। তখন এক মুসলিম কায়ী গোষ্ঠীর প্রধান সুলেমান শাহের ছেলে আর্তুগুল গাজী ডাক দিয়েছিলো পুনরুত্থানের ডাক দিয়েছিলো "ন্যায়বিচার চিরন্তন " স্বাধীনতা চিরন্তন " এই স্লোগানে।
এটা তাদের গল্প যারা বীজয়ের স্বপ্ন দেখতো। যারা নির্বিঘ্নে শত্রুর উপর ঝাপিয়ে পড়তো। যারা বিপদকে হাসি মুখে স্বাগত জানাতো। যারা সূর্যকে বানিয়েছিলো তাদের নিশানা এবং আাকাশকে তাবু। যারা তাদের ঘোড়াকে ছুটিয়ে নিয়ে যেতো দূর -দিগন্তে।
যারা তরবারিকে বানিয়েছিলো তাদের সঙ্গী, তারা ছিল অকুতোভয় সৈনিক। তারা সত্যের বাণী ছড়িয়ে দিতো সাগরের পর সাগর এবং ভূখণ্ডের পর ভূখণ্ডে।
যখন খ্রিস্টান ধর্মের যাজক ও গীর্জার অত্যাচার ও অনাচারের যাতাকলে পীষ্ঠ ইউরোপ সমাজ, সেই সময় (১৪ শতকে) Enlightenment Movement এবং রেঁনেসার নামে খ্রিস্টান প্রটেস্টান্ট আন্দোলনের মধ্যদিয় গড়ে উঠে সেক্যুলারিজম বা ধর্ম নিরপেক্ষ মতবাদ। এই মতবাদ বর্তমানে আমাদের ধর্মীয় বিষয়ের বাহিরে আমাদের সামগ্রিক জীবনেকে সুকৌশলে প্রভাবিত করছে। সেক্যুলারিজম আমাদের মননে এমনভাবে স্থান করে নিয়েছে যা আমাদের অজান্তে স্রষ্টার জায়গায় Himself বা আমিত্ব এবং Science বিজ্ঞানকে বসিয়ে খুব সুকৌশলে স্রষ্টার প্রতি বিমুখতা তৈরী করছে।
১৯২২ কামাল আতাতুর্ক মুসলিম বিশ্বের সর্বশেষ খেলাফতের ফাইনাল পোস্টমর্টেম করে তুরস্কে সেক্যুলারিজমের যে প্রায়োগিক পত্তন ঘটায়, সময়ের ব্যবধানে সেই ভুখন্ডে সুলতান এরদোগানের নির্দেশে সেক্যুলার মননে কুঠারাঘাত করেছেন এই " দিরিলিস এরতুগ্রুল " সিরিয়াল। সিরিয়ালের পরতে পরতে সামগ্রিক জীবনে আল্লাহর প্রতি অবিচল বিশ্বাস ও নির্ভরশীলতা এবং " যুদ্ধ আমাদের, বিজয় আল্লাহর, স্রষ্টার নির্ধারিত সময়ের আগে কেউ মৃত্যুবরণ করেনা " ইত্যাদি এন্টি-সেক্যুলার বাণী প্রধান্য পেয়েছ। সিরিয়ালে ইবনুল আরাবীর ভূমিকা সেক্যুলার মানসিকতার বিপরীতে সৃষ্ট অন্যতম সেরা কারেক্টার বা চরিত্র।
চরিত্রগুলির কথা বলার পূর্বে বলতে হয়_
এশিয়ার মালভূমিতে যাযাবর জীবন যাপনকারী ছোট্ট কা'য়ী গোষ্ঠীর নেতা সুলাইমান শাহ ও হায়েমে বেগমের সন্তান নাম "আরতুগূল"।আনুমানিক ১১৯১-১১৯৮ খৃঃ এর কোন একসময় তিনি জন্মগ্রহণ করেন, আর মৃত্যুবরন করেন ১২৮০ খৃঃ।পিতার সেনাবাহিনীর প্রধান যোদ্ধা ছিলেন তিনি।পিতা সুলাইমান শাহ-ই মূলত তার চিন্তামগজে বীরত্ব আর ঈমানী তেজের বীজ রোপণ করেন।
ইবনে আরাবী (১১৬৫-১২৪০) ছিলেন একজন আরব সুফি সাধক,লেখক ও দার্শনিক। তিনি ঐতিহাসিক ভূমিকাগুলিতে যুদ্ধ,ত্যাগ,সংগ্রাম ও জীবনের উত্তান পতনে কুর'আন-সুন্নাহের প্র্যাকটিক্যাল প্রয়োগ দেখিয়েছেন বিভিন্ন উপদেশের মাধ্যমে , যখনই রাসূল(সা)এর উম্মতের এই দলটি কোন বড় বিপদ বা সিদ্ধান্তহীনতার মধ্যে পড়েছে তখন তিনি উপস্থিত হতেন এবং কুর'আন হাদিসের শিক্ষা ও ইতিহাসের বাস্তবমুখী প্রয়োগগুলি তিনি সুন্দর করে বুঝিয়ে দিতেন। শাহাদাত, সবর হচ্ছে এই চরিত্রের মূল শিক্ষা..
.
দীর্ঘ এই সিরিয়ালে ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র, রাজনীতি, কূটনীতি, যুদ্ধনীতি, ন্যায়বিচার এবং শাসক হিসেবে একজন মানুষের কি ধরণের ভূমিকা থাকা উচিত তা সুন্দরভাবে উপস্থাপন
করা হয়েছে।
মহানায়ক/বীরযোদ্ধা /বে এবং গভর্নর হিসেবে আরতুগ্রুল গাজীর বিচক্ষণতা, বুদ্ধিমত্তা, সাহসিকতা, রণকৌশল,ন্যায়বিচার আপনাকে বিস্মিত করবে। একটি গোষ্ঠীর প্রধান বে হিসেবে আরতুগ্রুলের নিজ ভাই দুন্দার ও প্রিয় বন্ধু/সহযোদ্ধা এবং আল্পপ্রধান বামসী আল্পেকে শাস্তি প্রদান এবং ভুলের প্রায়শ্চিত্ত করার মাধ্যমে স্বজনপ্রীতির মূলোৎপাটনের প্রতিচ্ছবি আপনাকে নতুন করে ভাবতে সাহায্য করবে । আকস্মিক হালিমা সুলতানা (তৎকালীন সেলজুক সম্রাজ্যের শাহজাদী নোমান কন্যা এনং আর্তুগুল গাজীর হৃদয়স্পন্দন /প্রিয় সহধর্মিনি) মৃত্যুর পর মা হারা তিন সন্তান গুন্দুজ, সাভচী আর উসমানকে প্রতিপালনে বাবা হিশেবে আরতুগ্রুলের ভূমিকা ছিল অবিস্মরনীয়।
সোলাইমান শাহ -হাইমে মা, আরতুগ্রুল-হালিমা সুলতানা, আরকিয -তারগুত, বামসী-হাফসা খাতুন,দোয়ান-বানুচিচেক হাতুনের পরস্পরের প্রতি প্রেম-ভালবাসা ইতিহাস স্বীকৃত অনেক প্রেমের উপাখ্যানকে হার মানাবে।
মা,শাশুড়ি, দাদী এবং কায়ি বসতির প্রধান হাতুন হিশেবে হাইমেমার অভ্যন্তরীণ শান্তি রক্ষানীতি আর প্রয়োজনের সময় সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা আপনাকে অভিভূত করবে।
সত্যের পথে অবিচল ও দৃঢ়তার উদাহরণ হিশেবে নিজ গোত্রের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণকারী আলীয়ার বে, আসলিহান, গুনাল্প বে এবং ইলবিলগে হাতুনের ভূমিকা বিশুদ্ধ হৃদয়ে নতুন করে প্রাণের সঞ্চার করবে।
সত্যের আলোর সন্ধান পেয়ে টেকফুর (গভর্নর) এ্যরেস, ক্লাডিউস এবং মারগানের ইসলাম ধর্মের সুশীতল ছায়াতলে আগমন আপনার চোখে অশ্রুঝরাবে।
মুসলিম রাষ্ট্রের ঊইপোকা যারা ভেতর থেকে সেলজুক সাম্রাজ্যকে ছুরিকাঘাত করেছে তাদের পরিচয় পাবেন সাদেত্তিন কুপেক, কুরতুগলো, আমীর বাহাউদ্দীন এবং বায়বোলাত বে (আলবাস্তি) চরিত্রের মাধ্যমে যা আপনাকে রাগান্বিত ও শিহরিত করবে।
উচ্চাকাঙ্ক্ষী ক্ষমতালিপ্সু হিশেবে উরাল বে, খ্রিস্টান সম্রাটের অবাধ্য দ্রাগোস এবং সিরমা খাতুনের উদাহরন দেখতে পাবেন।
এই সিরয়ালে সাক্ষাৎ পাবেন দেলিদেমির (বিখ্যাত অস্ত্রবীদ) আর্তুক বের (আর্তুগুলের সহকারি/ বুদ্ধিজীবি) মত অসাধারণ প্রতিভাবান মানুষ এবং জানতে পারবেন মুসলিম রাষ্ট্রের কল্যানে কর্মরত রাষ্ট্রের গোপন সংঘ " White Beard" (সাদা দাড়ি) সম্পর্কে।
এছাড়া সিরিয়ালটি মনোযোগ দিয়ে অবলোকন করলে আপনি মনের অযান্তেই অনেক মুল্যবান বিষয় সম্পর্কে জানতে/বুঝতে পারবেন। আপনি ইসলামের কিছু মৌলিক বিষয়বস্ত আপনার অন্তরে জায়গা করে নিবে। আপনি খুবই মনোযাগী হন তবে মহাগ্রন্থ বল কোরআানের বহু আয়াত আত্মস্থ করতে পারবেন যেগুলো আপনার বাস্তবিক জিবনে বাস্তবায়ন করতে পারলে আপনার ইমান আকিদা নিংসন্দেহে বৃদ্ধি পাবে।
কঠিন বিপদে কিভাবে এক আল্লাহর উপর বিশ্বাস স্থাপন করতে হয়, ধৈর্য ধরতে হয় সে আকিদা আপনার মনে বীজ বপন করবে।
আল্লাহর বড়ত্ব প্রকাশে আল্লাহু আকবার, প্রশংসায় আলহামদুলিল্লাহ, সুবহানাল্লাহ, মাশাল্লাহ এবং প্রতি কাজের শুরুতে বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম বলতে শুরু করবেন।
এছাড়া মহানবী (স) এর কিছু গুরুত্বপূর্ণ বাণী জানতে পারবেন।
সর্বোপরি নয়ান, আলেঞ্জাক, আরিকবুকা সহ কতিপয় মোঙ্গল সেনাপতির দুর্ধর্ষ চরিত্রের মাধ্যমে চেঙ্গিস খানের প্রতিষ্ঠিত মোঙ্গল সাম্রাজ্যের বর্বরোচিত হত্যাযজ্ঞের নির্মম ইতিহাসের প্রতিচ্ছবি অবলোকন করবেন।।
উক্ত সিরিয়ালের কয়েকটা নীতিবাক্য
- # বাবা এমন একটি আশ্রয় যিনি শীতকালে ঠান্ডায় থাকেন কিন্তু সন্তানদের ঠান্ডা লাগতে দেয়না।
- কারন একজন বাবার হৃদয়ের প্রজ্জ্বলিত আগুনই তার সন্তানকে উষ্ণতা দান করে। চাই তুমি সাত বছরের বালক অথবা সত্তর বছরের বৃদ্ধ হও বাবা তোমাকে সর্বদা আশ্রয় দিয়ে যাবে।
- # কথা রুপার মতো আর চুপ থাকাটা স্বর্নের মতো মূল্যবান আর এমন মূল্যবান সম্পদ যেখানে -সেখানে খরচ করতে হয়না।
- এমন হাজারো ওসিয়ত আপনার অন্তরকে সতেজ করে তুলবে।
- ইনশাআল্লাহ।
# সংগ্রাম /যুদ্ধ আমাদের
বিজয় আল্লাহ তালার।
[ সিরিয়াল টি দেখতে 'আযমী পথিক' পেইজের নিম্নের লিংকে ক্লিল করুন।। https://www.facebook.com/1635156629963886/posts/1685298604949688/]
.
ভালবাসি_ গাজী আরতুগূল।
সালাহঊদ্দীন
Great review
ReplyDeletethank u dear
DeleteOutstanding review.cary on dear ��
ReplyDeleteOutstanding review.cary on dear 💖
ReplyDelete